ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে রোজিনা খাতুন নামে এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় জনতা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মুখে ৪ লাখ টাকায় রফাদফার কথা ভেসে বেড়ালেও, ভুক্তভোগী পরিবার একটি টাকাও পায়নি বলে দাবি করেছেন। মৃত রোজিনা খাতুন উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের চেউনিয়া গ্রামের মোঃ আরোজ আলী জোয়ারদারের মেয়ে। জানা গেছে, সন্তান প্রসব বেদনা উঠলে গত ১২ আগষ্ট সকালে কালিগঞ্জের ফাতেমা প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় রোজিনাকে। ঐদিনই ডাঃ প্রবীর বিশ্বাস রোজিনাকে সিজার করেন। অভিযোগ রয়েছে, সচরাচর
ডাক্তাররা সিজারের পূর্বে যে পরিক্ষা নিরিক্ষা করে থাকেন, তার মধ্যে আল্ট্রাসনোগ্রাম না করেই দুই মাস আগে করা আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখে ওটিতে নেওয়া হয় রোজিনাকে। সিজার শেষে চারদিন পর রোগিকে রিলিজ করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর পাঁচদিন পর সেলাই কাটতে আবার নেওয়া হয় ঐ ক্লিনিকে। একই দিনে সেলাই কেটে বাবার বাড়ি চেউনিয়া গ্রামে আসে রোজিনা। সেলাই কেটে আসার পরদিন সকালে পেটে ব্যাথা এবং অতি মাত্রায় ব্লিডিং শুরু হয় রোজিনার। পরে রোজিনার স্বামী আবুল হোসেন ফোনের মাধ্যমে ডাক্তারের সাজেশন গ্রহণ করে কিছুটা উন্নতি হলেও রাতে আবার একই অবস্থা দেখা দেয় রোজিনার। অবস্থার অবনতি দেখে গত শনিবার সকালে ফের ঐ ক্লিনিকে নিয়ে যায় স্বজনরা।
এদিকে রোজিনার স্বামী সাংবাদিকদের জানান, ব্লিডিং বন্ধ না হওয়ায় কর্তব্যরত ডাক্তার দুই ঘন্টার মধ্যে পাঁচ ব্যাগ রক্ত এবং কোন পরিক্ষা নিরিক্ষা ছাড়াই কমপক্ষে দেড়’শ ইনজেকশন পুশ করে রোজিনাকে। এর আগে স্বজনরা রোগটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র নিতে চাইলেও নিতে দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা বলেছেন যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সাধ্যের মধ্যে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা চেষ্টা করে যাবো।
সকাল থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত এই অপচেষ্টা চালিয়ে রোগী যখন মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ছে তখন দায় এড়াতে ফরিদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রেফার্ড করা হয় বলে জানান রোজিনার স্বামী। পরে ফরিদপুর নেওয়ার পথে মাগুরা এলাকার মধ্যে পৌঁছলে রোজিনার মৃত্যু হয়।
এঘটনায় ফাতেমা প্রাইভেট
হাসপাতালের মালিক একরাম হোসেন জানান, সিজারের পর রোগিকে কিছু নিয়ম মানতে বলা হয়েছিল। হয়তো নিয়ম না মানার কারণে এমনটি ঘটতে পারে। তবে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি বিভিন্ন ব্যস্ততার কথা বলে এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে কালিগঞ্জ ক্লিনিক মালিক সমিতি, কয়েকজন সাংবাদিক ও ভুক্তভোগী পরিবারটির সাথে বসে চার লক্ষ টাকায় মিমাংসা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে রোগীর পরিবারের ক্ষতিপূরণ হিসেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৪ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা জানালেও রোজিনার স্বামী আবুল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, আমরা কোন টাকা পায়নি। রোজিনার স্বামী মোঃ আবুল হোসেন কুষ্টিয়া জেলার বাসিন্দা। রোজিনাকে বিয়ে করার পর থেকে তিনি শুশুরালয়ে বসবাস করে আসছেন।
ঘটনার বিষয়টি জানতে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জনের নিকট একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
আরো পড়ুন