চাঁদপুর শাহরাস্তিতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী আশ্রয় কেন্দ্রে হাজা পরিবার
জসিম উদ্দিনঃ
চাঁদপুরের শাহারাস্তি উপজেলায় কয়েক দিনের বৃষ্টি ও উজানের পানি নেমে একলক্ষ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে হাজার পরিবার।
শাহরাস্তি পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড এবং উপজেলার টামটা উত্তর ইউনিয়ন, টামটা দক্ষিণ ইউনিয়ন, রায়শ্রী উত্তর ইউনিয়ন, রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়ন, সুচিপাড়া উত্তর ইউনিয়ন, সুচিপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন, চিতোষী পূর্ব ইউনিয়ন, চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ বাড়িঘর পানির নিচে এবং রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। একই সঙ্গে তলিয়ে গেছে মাছের ঘের এবং গবাদি পশুর ঘর।
সূচিপারা ডিগ্রি কলেজে আশ্রয় নিয়েছে তিন শতাধিক মানুষ। তারা এই আশ্রয় কেন্দ্রে পরিবার-পরিজন নিয়ে আছেন। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন গবাদি পশুসহ হাঁস মুরগি।
আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা কাসিম বলেন, আমার বাড়ি উপজেলার সূচীপাড়া। আমাদের ঘরের মধ্যে কোমর পর্যন্ত পানি। ঘরে পানি উঠে যাওয়ার কারণে বৃদ্ধা মাসহ পরিবার-পরিজন নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছি। কবে পানি কমবে সেই চিন্তায় আছি।
আরেক যুবক রাশেদ বলেন, বাড়িতে পানি ওঠার কারণে আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছি। বন্যার পানিতে আমার হাস-মুরগি, গরুসহ ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
আয়না তলী এলাকার আসমা বেগম বলেন, আমাদের গ্রামের উত্তর ও দক্ষিণপাড়া সব বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। আমাদের দেখার জন্য এখন পর্যন্ত কেউ আসেনি। আমরা সরকারের সহযোগিতা কামনা করি।
উপজেলার শোরসাক গ্রামের আমিনুল ইসলাম বলেন, আজকে চারদিন আমাদের এলাকায় পানি। কুমিল্লা ও ফেনীর পানি আমাদের এলাকায় চাপ দেওয়ায় ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। ডাকাতিয়া নদী দিয়ে বানের পানি প্রবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কমছে না।
শোরসাক উত্তর পাড়া ইসলামীয়া মডেল দাখিল মাদ্রাসায় আশ্রয় কেন্দ্রের স্বেচ্ছাসেবক উক্ত মাদ্রাসার শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, শাহরাস্তির অবস্থা ভালো নেই। আশ্রয় কেন্দ্রে প্রতি মুহূর্তে লোক সংখ্যা বাড়ছে। প্রথম এই আশ্রয় কেন্দ্রে মাত্র ৯ জন আসে। পরে মানুষের সংখ্যা বেড়ে এখন সবমিলে ২৮০ জন আছে। এখানের মানুষগুলো খেটে খাওয়ার মানুষ। তাদের জমানো টাকা নেই। যার কারণে এসব মানুষ অসহায় হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও যাদের গরু, ছাগল, হাস, মুরগি আছে, তারা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এলাকার কিছু বিত্তবান মানুষ আছেন। তারা এখানের অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিছু সংগঠনও তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। উপজেলা প্রশাসন থেকে চাল, ডাল, আলু দিয়েছে। এখানের মানুষের পরিবার দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিত্তবানদের যার যার অবস্থান থেকে বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করছি।
স্থানীয় শিক্ষক নুর আলম বলেন আমরা গত কয়েকদিন যারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে তাদেরকে খুঁজে খুঁজে খাবার সামগ্রী দেওয়ার চেষ্টা করছি। এই মুহূর্তে দুর্গত মানুষের পাশে সবার এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইয়াসির আরাফাত বলেন, উপজেলার একটি পৌরসভা এবং দশটি ইউনিয়নে একলক্ষ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এই পর্যন্ত ৭ শতাধিক পরিবার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রে আরও পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও উপজেলার পৌরসভাসহ সব স্থানে কম-বেশি জলাবদ্ধতা হয়েছে। আমরা এসব লোকদের সহযোগিতায় কাজ করছি। এলাকার বিত্তবান দেরকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
আরো পড়ুন।