পিরোজপুর জেলাকে মাদক, জঙ্গি তৎপরতা ও সন্ত্রাসমুক্ত নিরাপদ জনপদ গড়তে জেলা পুলিশ সুপার খাঁন মুহাম্মদ আবু নাসের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। একই সাথে তিনি সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। মাদক, সন্ত্রাস, নাশকতা, চুরি-ডাকাতি, ইভটিজিং, বাল্য বিবাহসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড প্রতিরোধে জনগণের সচেতনতা ও সম্পৃক্ততার লক্ষ্যে পিরোজপুরের ৭টি উপজেলায় ৫০৩টি মসজিদে বয়ান, বিভিন্ন স্থানে ওপেন হাউজ ডে ও কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার ( ৬ নভেম্বর) জুমার নামাজের সময় পিরোজপুর কেন্দ্রীয় মসজিদে এক আলোচনায় পুলিশ সুপার খাঁন মুহাম্মদ আবু নাসের বলেছেন, মাদক, জঙ্গি, সন্ত্রাস, ইভটিজিং, বাল্য বিবাহ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, কিশোর গ্যাংসহ চলমান বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আইন শৃংখলা বাহিনীকে সহযোগিতা আহবান জানান। এক্ষেত্রে তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি পিরোজপুর জেলার ৭ উপজেলায় মসজিদের ইমামদের নিজ নিজ এলাকায় নামাজের সময় বক্তব্য প্রদানের জোর দেয়া হয় এবং একটি সুষ্ঠ সুন্দর সমাজ গড়ার লক্ষ্যে প্রতিটি নাগরিকের সঠিক ভাবে নিজ নিজ এলাকায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকার অপরাধ নির্মূলে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার আহবান।
এসময় সদর থানার অফিসার ইর্নচাজ মো. আবদুস সোবাহানসহ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, মসজিদের ইমাম, জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, শুক্রবার জনসচেতনতায় জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার ৬৩টি মসজিদে জুমার নামাজে ইমাম সাহেবদের সহযোগিতায় ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের মাঝে বিশেষ বয়ান এবং মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গী বিরোধী প্রচারপত্র বিতরণ করা হয়। পরে দেশ ও মানুষের কল্যাণে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
এ সময় ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে ভান্ডারিয়া অফিসার ইনচার্জ আহম্মেদ আনওয়ার বলেন, মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিী বিরোধী অপরাধে সাথে জড়িতদের ধরিয়ে দিয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করতে হবে। জনসাধারণকে সকল সহায়তা দেওয়ার জন্য জেলা পুলিশ সব প্রস্তুত রয়েছে। তিনি ধর্মীয় সম্প্রতি বজায় রাখার জন্য সকলকে আহবান জানান।
ইন্দুরকানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মারুফ হোসেন জানান, ‘গত ৮ সেপ্টেম্বর যোগদানের পর থেকেই পিরোজপুর জেলাকে মাদক, জঙ্গি ও সন্ত্রাসমুক্ত রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ আবু নাসের। তার নির্দেশে উপজেলার ৬৫ মসজিদে ৬৫ পুলিশ সদস্য মুসল্লিদের মাঝে লিখিত বার্তা পাঠ করেছেন।’
জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৭টি উপজেলার ১২ লাখ মানুষের নিরাপদ জীবন ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে এ জনহিতকর উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। এ জনসচেতনতা কর্মসূচি বাস্তবায়নে পুলিশে সুপার একটি প্রচারপত্র প্রকাশ করেছেন। এতে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট দেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা নতুন এক বাংলাদেশ পেয়েছি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের সকলের অনেক দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে। জেলার প্রতিটি উপজেলা ও গ্রাম পর্যায় মাদকমুক্ত, জঙ্গীমুক্ত ও নিরাপদ বাসযোগ্য ও জনপ্রত্যাশার আবাসস্থল হিসেবে গড়ে তোলায় পুলিশ প্রশাসন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। জেলার ১২ লাখ মানুষের জন্য মাত্র ১ হাজার জন পুলিশ প্রশাসন দিয়ে নিরাপদ করা করা একটি চ্যালেঞ্জ। তাই পুলিশ জেলার ১২ লাখ নাগরিকের মাঝে এই বার্তা দিতে চান যে, ‘পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ’। এ মন্ত্র সামনে রেখে নাগরিক সমাজ একাত্ম হয়ে সমাজের সকল অপরাধ প্রতিরোধে কাজ করা জরুরি। সচেতন নাগরিকদের সহায়তায় পুলিশ সমাজে মাদক, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, ইভটিজিং, বাল্যবিয়ে, টেন্ডারবাজি, কিশোর গ্যাং, অনলাইন জুয়া, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতাসহ যে কোন ধরণের সমাজ বিরোধী অপরাধ দমনে নাগরিক সমাজ পুলিশকে নির্ভয়ে সহায়তা করবেন। এজন্য ধর্মপ্রাণ মানুষ ও ধর্মীয় নেতাদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
এ ব্যাপারে পিরোজপুর পুলিশ সুপার খাঁন মুহাম্মদ আবু নাসের বলেন, পুলিশ দেশ ও জনতার বন্ধু হিসেবে নতুন কর্ম উদ্যোগে কাজ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। দেশ ও মানুষের কল্যাণেই পুলিশ প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করছে। সমাজের সকল অন্যায় অবিচার বন্ধে সচেতন নাগরিকের ভ‚মিকা আমরা সম্মানের সাথে দেখি। সকলে মিলে পিরোজপুর জেলার সকল উপজেলার মানুষের শান্তি ও সম্প্রীতির মানবিক এক সমাজ গড়তে চাই। একটি সুন্দর নিরাপদ পিরোজপুর গড়ে তুলে সকলে মিলে সম্মানের সাথে বাঁচতে সকল মানুষের সচেতনভাবে ভূমিকার অনুরোধ জানাই। তিনি ধর্মীয় সম্প্রতি বজায় রাখার জন্য সকলকে আহবান জানান।
আরো পড়ুন।