বরগুনায় বিকল্প আয়ের পথ খুঁজছেন জেলেরা, মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন নিজ পেশা থেকে।

বরগুনায় বিকল্প আয়ের পথ খুঁজছেন জেলেরা, মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন নিজ পেশা থেকে।

বরগুনায় বিকল্প আয়ের পথ খুঁজছেন জেলেরা, মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন নিজ পেশা থেকে।

মোঃ আবুল বাসার সাইফুল ক্রাইম রিপোর্টার।

উপকূলীয় জেলা বরগুনায় নিবন্ধিন ছাড়াও কয়েক হাজার জেলে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে এ পেশায় দিনদিন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হওয়ায় অনেকে এ পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। অনেক জেলেই এখন বিকল্প আয়ের পথ খুঁজছেন।
বিভিন্ন এনজিওর ঋণ ও মহাজনদের দাদন পরিশোধের চাপ, কাঙ্ক্ষিত মাছ না পাওয়া, একের পর এক নিষেধাজ্ঞা, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, জলদস্যু আতঙ্ক ও নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এই পেশায় আগ্রহ হারাচ্ছেন জেলেরা।

দেশের মোট চাহিদার ৪০ ভাগ মাছ আসে সাগর, নদ-নদীসহ প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে। জেলেরা এসব উৎস থেকেই মাছ শিকার করে সকলের সামুদ্রিক মাছের চাহিদা মেটায়। তারা পেশা পরিবর্তন করলে সামুদ্রিক মাছের ঘাটতি দেখা দেবে। তাই জেলেরা যাতে এই পেশায় থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-যাপন করতে পারে সেজন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জেলেদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, একসময় জেলে পেশা দিয়ে খুব ভালোভাবেই সংসার চলত। এখন এ পেশার পাশাপাশি অন্য কাজ না করলে তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা হয় না। সাগরে মাছ না থাকায় অনেক সময় লোকসানে পড়তে হয়। তাই তারা বিকল্প পেশা খুঁজছেন।

৪০ বছর ধরে জেলে পেশায় থাকা তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া এলাকার মোঃ হাবিব বলেন,আগে যেমন তেলের দাম ছিল তখন ভালোই লাভ হতো। কিন্তু এখন তেলের দাম চড়া, এতে আমাদের ট্রলার নিয়ে মাছ ধরতে হিমশিম খেতে হয়। সাগরে মাছ ধরে এখন আর সংসার চলে না। তাই বাধ্য হয়েই অন্য কাজ করতে হয়।

তালতলীর সোনাকাটা এলাকার জেলে রহিয় মিয়া বলেন, আগে সাগরে যে মাছ পাওয়া যেত তা বিক্রি করে নিজেরাও খাওয়ার জন্য নিয়ে আসতাম। বর্তমানে সাগরেই মাছের আকাল। আগে যে-সব পয়েন্টে মাছ পেতামই এখন সেসব জায়গাতে মাছ নেই। তারমধ্যে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ নানান প্রতিকূলতা তো আছেই। তাই বিকল্প আয়ের পথ খুঁজছি।

বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের জেলে মোসলেম বলেন, সব মালামালের দাম বেড়েছে। চাল, ডাল, তেল, বরফ সবকিছুই কিনতে হয় অধিক দামে। এভাবে জীবন চালানো কষ্টকর। মাছ ধরার সিজন থাকে ৫ মাস। এরমধ্যে আড়াই মাসই থাকে নিষেধাজ্ঞা। বাকি আড়াই মাসে ঝড়ঝাপটা-বৈরী আবহাওয়া থাকে। এখন শুধু জেলে পেশা দিয়ে সংসার চালানোর মত কোনো উপায় নাই। তাই অন্য পেশা খুঁজছি।

পাথরঘাটা উপজেলার জেলে আনোয়ার ববলেন, সাগরে ইলিশ তেমন পাওয়া যায় না। মাঝে মাঝে অনেক ইলিশ ওঠে। কিন্তু আগে সাগরের কিছু পয়েন্টে মাছ পাওয়া যেতই। এখন আর সেসব পয়েন্টও মাছ নেই। এই পেশায় এখন লাভের চেয়ে লোকসান বেশি। সাগর থেকে এসেও আমাদের অন্য কাজ খুঁজতে হয়, তারচেয়ে জেলে পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যাওয়াই ভালো। অন্য পেশায় নিশ্চিত থাকা যায় যে দিনশেষে কিছু হলেও মজুরি পাব।

এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মহসিন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ, দুর্যোগসহ মানবসৃষ্ট নানান কারণে মাছের উৎপাদন কমেছে। এসব কারণে বিচরণ ও প্রজননের জায়গায় পরিবর্তন করছে নদী-সাগরের মাছ। গত কয়েক দশকে জেলেদের তুলনায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি না পাওয়ায় সাগর ও নদ-নদীতে চাপ বেড়েছে। জেলেদের এ পেশার পাশাপাশি আর্থিক স্বচ্ছলতার লক্ষ্যে আমাদের বিভিন্ন প্রকল্প চলমান রয়েছে।

 

আরো পড়ুন।

 

http://টেকনাফ উপকূলে মাছ ধরার সময় নৌকা উল্টে নিখোঁজ জেলের লাশ উদ্ধার।

 

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *