কক্সবাজার টেকনাফে পাচারকারীর খপ্পর থেকে উদ্ধার হওয়ার পরও শান্তিতে নেই দুই যুবক।
শামসুল আলম শারেক , টেকনাফ(কক্সবাজার)।
চাকরি দেওয়া কথা বলে নিয়ে গেলেন টেকনাফে, গিয়ে তুলে দিয়েছিলেন মালয়েশিয়ায় মানব পাচারকারী সিন্ডিকেটের হাতে। জিম্মি করে দুই যুবকের উপর চলে নির্মম নির্যাতন। পাচারকারীর মুলহোতা হোয়াইক্যং নয়াপাড়া এলাকার আয়াজ উদ্দিন। মানব পাচারকারীরা দাবী করেন মোটা অংকের টাকা।
ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৭ই আগস্ট টেকনাফের হোয়াইক্যং নয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা আজিজ ও পারভেজ সাথে। চাহিদা মোতাবেক অংকের টাকা দিয়ে (১৫ নভেম্বর) উদ্ধার হয় কৌশলে।
ভিকটিম আজিজুর রহমানের মা হাছিনা বেগম জানান, ‘আমার ছেলেকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে উদ্ধার করি। উদ্ধারের পর আয়াজ উদ্দীনের বিরুদ্ধে সমাজে বিচার দেওয়া হয় তখন আয়াজ উদ্দীন টাকা ফেরত দেবে বলেছিল এরপর থেকে আয়াজ উদ্দীন সহ তার পরিবার প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।’
সমাজপতি হাজী মুহাম্মাদ ইদ্রিস জানান, ‘আয়াজ উদ্দীনের মাধ্যমে দুই যুবক অপহরণ হয়, অপহরণকৃত পরিবার টাকা দিয়ে তাদের উদ্ধার করেন। আয়াজ উদ্দিনকে বিচারের জন্য ডাকা হয়েছিল কিন্তু সেই আর আসেনি। আয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১৭ই আগস্ট নয়াপাড়া এলাকার আয়াজ উদ্দিন দৈনিক ১ হাজার টাকা বেতনে চাকরি দেওয়ার কথা বলে আজিজুর রহমান ও মোঃ পারভেজ নামের ২ জনকে নিয়ে গিয়ে মালেয়শিয়া পাচারকারী সিন্ডিকেটের হাতে বিক্রি করে দেওয়া হয়। ঘটনার দিন শেষ রাত পর্যন্ত ভিকটিম আজিজ ও পারভেজ বাড়িতে না আসায় বিভিন্ন আত্মীয় স্বজন ও এলাকায় খোঁজাখোজি করে কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। দীর্ঘ ৪ দিন পর অপরিচিত নম্বর থেকে ১নং ও ২ নং ভিকটিমের মায়ের মুঠোফোনে কল করে ২ লক্ষ টাকা দাবি করে এবং দ্রুত টাকা না পাঠালে ভিকটিমদের মেরে ফেলার হুমকি দেন বলে জানা যায়।
পরবর্তীতে ভিকটিমের পরিবার নিকট আত্মীয় স্বজনসহ বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা ধার করে মুক্তিপণ দিয়ে ভিকটিমদের উদ্ধার করে৷ এই ঘটনায় পাচারের মুলহোতা আয়াজ উদ্দিন সহ পাচার কাজে জড়িত সবাইকে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য অনুরোধ জানান ভিকটিমের পরিবার।
ভিকটিম আজিজ জানান, ‘বটতলী খেলতে গেলে নয়াপাড়া এলাকার আয়াজ উদ্দিন তাদের দৈনিক ১ হাজার টাকা বেতনে চাকরি দেওয়ার কথা বলে টেকানফে নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর তার এক আত্মীয়ের বাসায় খেতে যাওয়ার কথা বলে নিয়ে গিয়ে, বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে বের হয়ে চলে আসে৷ দীর্ঘক্ষণ আয়াজ উদ্দিন ফেরত না আসায় তারা চলে আসতে চাইলে তাদের বিক্রি করে ফেলছে বলে জানান বাড়ির মালিক।
সেখান থেকে তাদের নৌকায় তুলে মিয়ানমার নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে মারধর শুরু করে এবং বাসায় ফোন করে মুক্তিপণ দাবী করে৷ পরবর্তীতে ভিকটিমদের বাড়ি থেকে আড়াই লক্ষ টাকা দেওয়ার পর তাদের টেকনাফে নিয়ে এসে ছেড়ে দেয় বলে জানান ৷
উল্লেখ্য, এই বিষয়ে ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে মুক্তিপণ আদায়ের নগদ টাকা গ্রহণের একটি ভিডিও ফুটেজও এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
এই ঘটনায় ভিকটিম আজিজুর রহমানের মা হাছিনা বেগম বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত আয়াজের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে টেকনাফ থানার অফিসার্স ইনচার্জ (তদন্ত) হিমেল রায় জানান, ‘ঘটনার বিষয়ে অবগত আছি, দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা ছুটিতে আছেন, তিনি আসলে বিস্তারিত জানানো যাবে।’
আরো পড়ুন।