কুমিল্লায় সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিককে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় দাউদকান্দি থানা পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের
স্টাফ রিপোটার :
কুমিল্লায় দাউদকান্দি থানা পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করার জেরে সাংবাদিককে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় থানার ওসিসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ১০-১৫জনের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার মামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৮শে আগষ্ট) কুমিল্লার কোতয়ালি মডেল থানায় মামলার এজাহার দায়ের করেন দৈনিক মুক্ত খবরের কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক আলোকিত প্রতিদিনের ক্রাইম রিপোর্টার ভুক্তভোগী সাংবাদিক আবু বকর সিদ্দিক। এজাহারে দাউদকান্দি মডেল থানার বর্তমান ওসি মোজাম্মেল হককে ১নং, কুমিল্লা নগরীর মোগলটুলি এলাকার
মৃত আমির হোসেনের ছেলে দেলোয়ার হোসেন জাকিরকে ২নং, দাউদকান্দি মডেল থানার এসআই এনামুল হককে ৩নং,
থানার কথিত ক্যাশিয়ার কনস্টেবল আলী আক্কাশকে ৪নং ও এসআই সরোয়ার হোসেনকে ৫নং এবং অজ্ঞাতনামা আরো ১০-১৫জনকে আসামী করা হয়। বাদীর এজাহার সূত্রে জানা যায় যে, বিগত দিনে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এবং চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনার ঘনিষ্ট পরিচয়ে দীঘদিন যাবৎ ক্ষমতার প্রভাব খাঁটিয়ে এবং অনৈতিকভাবে কুমিল্লার স্থানীয় সাধারণ জনগণ, বিভিন্ন মতের ও রাজনৈতিক নেতা-কমীদের উদ্দেশ্যপ্রণীতভাবে রাতের আধারে বাসা থেকে তুলে এনে হয়রানির উদ্দেশে হামলা- মামলাসহ অত্যাচার করে আসছিলো দাউদকান্দি থানা পুলিশ তথা মামলার আসামিরা। এতে ওই সাংবাদিক থানার বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে গত ১২, ১৩ ও ১৪ই জুন- ২৪ইং তারিখে জাতীয় দৈনিক আলোকিত প্রতিদিন পত্রিকায় “কুমিল্লায় ক্যাশিয়ার পরিচয়ে আক্কাশের চাঁদাবাজি, পরে সাংবাদিককে ঘুষ দিতে ওসি মোজাম্মেলের চেষ্টা” শিরোনামে এবং ২৪শে জুন- ২৪ইং তারিখে “কুমিল্লা দাউদকান্দির রায়পুর এলাকায় সড়কে অবৈধ স্ট্যান্ড, নেপথ্যে চাঁদাবাজি” শিরোনামে দুটি নিউজ প্রকাশিত করে। ফলে দাউদকান্দি থানা পুলিশের তথা আসামিদের যোগসাজগে ও পরিকল্পনায় তারা বিভিন্ন ব্যক্তিকে দিয়ে ওই সাংবাদিককে বিভিন্ন ধরণের ব্লাকমেইলিংসহ বিভিন্ন হুমকি দিতে থাকতো। এ ঘটনায় ২৭শে জুন- ২৪ইং তারিখে কুমিল্লার তৎকালিন পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নানকে ব্যবস্থা নিতে ওই ভুক্তভোগী সাংবাদিক অভিযোগ (৪১৭১/m) দিলেও সে সময় তিনি তাৎক্ষনিকভাবে তেমন কোন ব্যবস্থা নেননি। এতে পুলিশের হেডকোয়ার্টার থেকে জেলা পুলিশকে তদন্তপূর্বক ২১ কার্যদিবসে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেন। এতে আসামিরা স্বপদে বহাল থাকায়
প্রভাব বিস্তার করে সন্ত্রাসী জাকির হোসেনকে ঠিক করে ওই সাংবাদিককে হত্যা করতে। ফলে সন্ত্রাসী জাকির হোসেন ওই সাংবাদিককে আগে থেকে চিনতেন বলে প্রাথমিকভাবে তাকে মুঠোফোনে ফোন দিয়ে সাবধান করে আর যেন কোন নিউজ
প্রকাশ না করা হয় এজন্য ওই সাংবাদিককে সতর্ক করে দেয়। কিন্তু ওই সাংবাদিকের নিকট দাউদকান্দি মডেল থানা পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় মাদকের জব্দ তালিকায় গড়মিল, কারচুপি ও নিরিহ মানুষকে হয়রানিসহ জ্ঞাত-আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আসায় তথ্য অনুসন্ধান করতে চেষ্টা করলে আসামি এসআই এনামুল ও সরোয়ার বিষয়টি জানতে পারলে তারা বিষয়টি ওসি মোজাম্মেলকে অবহিত করে। এতে আসামিরা তথা দাউদকান্দি থানা পুলিশ সন্ত্রাসী জাকির হোসেনকে আবারো ঠিক করে ওই সাংবাদিককে হত্যা করতে। এতে সন্ত্রাসী জাকির এক ব্যক্তিকে ঠিক করেন ওই সাংবাদিকের বাড়িতে হামলা করতে। কিন্তু ওই সাংবাদিকের বাসায় কড়া পাহাড়া থাকায় পরিকল্পনা ভেঙ্গে যায়। ফলে সন্ত্রাসী জাকির ওই সাংবাদিককে ২৮শে জুন রাত অনুমান সাড়া ১০টায় ফোন দিয়ে কুমিল্লা প্রেসক্লাবে আসতে বলেন। এতে তাৎক্ষণিকভাবে ওই সাংবাদিক নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কুমিল্লা প্রেসক্লাবের একজন দায়িত্বশীলকে ফোন দিয়ে বিষয়টি অবগত করেন এবং কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সামনে যান। এসময় প্রেসক্লাব বন্ধ থাকায় সন্ত্রাসী জাকির প্রেসক্লাবের সামনে এবং অজ্ঞাতনামা ৪-৫জনকে কিছুটা দূরে অবস্থান করতে দেখেন ওই সাংবাদিক। এসময় ওই সাংবাদিক বাইক থেকে নামতেই সন্ত্রাসী জাকির তাকে এলোপাথারী চড়থাপ্পর দিতে থাকেন এবং অজ্ঞাতনামা ৪-৫জন ব্যক্তি এগিয়ে এসে তার পাশে দাঁড়ায়। এতে সন্ত্রাসী জাকির তার কাছে থাকা ব্যবহৃত দুটি ফোন কেড়ে নিয়ে বিভিন্ন ধরণের হুমকি দিতে থাকেন এবং বলতে থাকেন যে, তোকে সেদিন ভালো করে রিকোয়েষ্ট করলাম, তোর কানে কথা যায়নি? কুমিল্লার এমপি কে? সিটি মেয়র কে? কুমিল্লা কার কথায় চলে? এগুলো জানিস না? আমরা বাহার ভাইয়ের রাজনৈতি করি, পুলিশকে নিয়ে আমাদের রাজনৈতি আছে। তুই পুলিশের বিরুদ্ধে নিউজ করিস কেন ইত্যাদি। এসময় সন্ত্রাসী জাকির তার কাছে থাকা অস্ত্র বের করে ওই সাংবাদিককে গুলি করতে উদ্যোক্ত হলে সঙ্গে থাকা অজ্ঞাতনামা ৪-৫জন ব্যক্তি তাকে ধরে থামাতে চেষ্টা করেন। সন্ত্রাসী জাকির তাকে প্রাঁণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আগামীকালকের মধ্যে কুমিল্লা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বলেন এবং তাকে তার অফিসে বসতে নিষেধ করে তার অফিসে কাল তালা লাগিয়ে দেবেন বলে হুমকি দেন। এরপর সন্ত্রাসী জাকির তাকে দিয়ে ১নং ও ৩নং বিবাদীকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন দিয়ে তার বুঝতে না পারার কারণে ভুল হয়েছে মর্মে সরি বলতে বলে এবং ভবিষৎে আর কখনো এমন হবে না মর্মে অভয় দিতে তাকে বাধ্য করেন। পরে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে ওই ভুক্তভোগী সাংবাদিক মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে এবং পরের দিন ২৯শে জুন দুপুরে বিষয়টি তৎকালীন পুলিশ সুপারকে মৌখিকভাবে জানানোর পরও রাজনৈতিক কারণে এবং ডিআইজির ভয়ে তিনি তখন তেমন কোন ব্যবস্থা না নিয়ে অভিযুক্ত ওসিকে সাবধান করেন।
আরো পড়ুন।
http://সিরাজগঞ্জে ত্রাণ ভান্ডার ভাংচুর ঘটনায় ১৬ লাখ টাকার ক্ষতি