ইসকনের কাঁধে ভর করে ফজলে করিম ও ফারাজের রামরাজত্ব।
নিজস্ব প্রতিবেদক
শুরু থাকলেই শেষ হতে হয়। চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, ভূমন্ডলের মতই কথাটি চিরন্তন সত্য৷ আর তাই ইতিহাস বলে একটা সময় চিরদিন রাজত্ব করার স্বপ্ন দেখা সেই ফেরাউনও স্থায়ী হতে পারেনি এই পৃথিবীতে। একেবারে স্পষ্ট কথা জন্মিলে মরিতে হবে সবাইকে।
যার উত্থান হয় তার পতনও অনস্বীকার্য। হতেই হবে। তবে অবশ্য ইতহাস বলে এই অতি সাধারণ কথাটি যুগ যুগ ধরে মানতে নারাজ ক্ষমতাধররা।ফলে তাদের পতনও হয়েছে জঘন্য ভাবে। আর ঠিক সেভাবেই দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে জনগণের মতের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে রাজত্ব করা হাসিনাও দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন ছাত্র জনতার আন্দোলনের তোপের মুখে পড়ে। সেদিন সকালের সূর্য পূর্ব দিগন্ত হতে জানান দিয়েছিল বাংলাদেশ আজ স্বাধীন হয়েছে এক স্বৈরাচার থেকে।
দিনটি ছিল ৩৫শে জুলাই বা ৫ আগষ্ট। জনগণ বলে ৭১ এর পর নাকি এটি বাংলাদেশের ২য় স্বাধীনতা। উপরের প্রারম্ভিক সূচনার মতোই রাউজানের বুকে জন্ম হয়েছিল আরেক ফেরাউনের। অত্যাচার আর জুলুম কাকে বলে টানা ২৪টা বছর দেখেছিল জনগন৷ তার নাম ফজলে করিম চৌধুরী। তিনি চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের অষ্টম জাতীয় নির্বাচন থেকে একাদশ অবধি অর্থ্যাৎ ২০০১ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত টানা ৫ বার জনতার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে ভোট চুরি করে এমপি হন।
যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম। হিন্দুদের জমি দখল, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, হত্যা, আয়নাঘরে বন্দী, ছিনতাইসহ আরো একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আর এসব নিয়ন্ত্রণ করতেই তিনি তৈরী করেছিলেন এক লাঠিয়াল সন্ত্রাসী বাহিনী। যাদের কাজই ছিল সন্ত্রাস করা। এভাবেই দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে দু’হাতে অবৈধভাবে কামিয়েছেন হাজার কোটি টাকা। করতেন বিলাসবহুল জীবন যাপন। বিদেশে টাকা পাচারেরও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। শেষে এই এমপিরও পতন হয়েছে। রাজ্য পুড়ে ছাই হয়েছে। আর এবার পতনের পর তার বিরুদ্ধে বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। শুধু এই সাবেক এমপি নয় তার পুত্রও ছিল জালিম। ফলে ক্ষমতার পর এখন বাপের কাধে হত্যা, অস্ত্রসহ ৩২ মামলা ও ছেলের কাধে উঠেছে একই অপরাধদ্বয়ের ১২টি মামলা। অনুসন্ধান বলছে, সাধারণ হিন্দুদের উপর নির্মমতা দেখালেও চট্টগ্রামের রাউজানের সাবেক এমপি ফজলে করিম চৌধুরী ছিলেন ইসকনের পৃষ্ঠপোষক।
নিয়মিত এ সংগঠনটিকে দিতেন অর্থের যোগান। এ ছাড়াও ভারতীয়র’ এর এজেন্টের খাতায়ও নাম আছে বলে জানিয়েছে বিশস্ত সূত্র।
মূলত ইসকনের কাধে চড়েই ভারতের ইশারায় বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকে ফজলে করিম ও ফারাজ করিমের (বাপ-বেটার) রামরাজত্ব।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের মদদপুষ্ট সাবেক এমপি ফজলে করিম ও তার পুত্র ফারাজ করিম এবং দীর্ঘদিন ধরে ইসকন (ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস) এর পৃষ্ঠপোষক ও অর্থের যোগানদাতা ছিলেন। বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে একাধিক ছবি ও ভিডিও ক্লিপস পেয়েছে এ প্রতিবেদক। সেখানে দেখা যাচ্ছে ইসকনের বেশ কয়েকজন নেতার সাথে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছেন তারা। সেখানে রয়েছেন সাবেক ইসকনের বহিষ্কৃত নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাশও৷ এছাড়াও নিয়মিত ইসকনের অনুষ্ঠানগুলোতেও অংশ নিত ফজলে করিম চৌধুরী ও ফারাজ করিম চৌধুরী।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন এ কারণের ৫ বার ভারতীয় চাপে পড়ে তাকে এমপি করানো হয়। মোটকথা তারা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি ইসকনের বিভিন্ন কার্যক্রমেও তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে এসেছেন।
সূত্র থেকে জানা যায়, ফজলে করিম ও তার পুত্র ফারাজ করিম ইসকনের কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় বেশ কিছু প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন এবং একাধিকভাবে অর্থের যোগান দিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন পুলিশ বিভাগের সাবেক বিতর্কিত কর্মকর্তাগণ, সাবেক সরকারের বিভিন্ন আমলাগণ এবং দলের নেতা-কর্মীদের সাথে মিলে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে । এছাড়া চট্টগ্রামে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারের কার্যালয়ের কিছু কর্মকর্তার সাথে তাদের গভীর সম্পর্ক রয়েছে এবং এই সম্পর্কের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের ইসকন সমর্থিত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে সু-সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
গোয়েন্দা তথ্য অনুসারে, তারা একাধিক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন এবং অর্থের যোগানদাতার ভূমিকা পালন করছেন। ফজলে করিম ও ফারাজ করিম নিয়মিতভাবে বছরে একাধিকবার ভারতে সফর করেন এবং সনাতন ধর্মের প্রধান ধর্মগুরু এবং স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতেন।
এছাড়া গত ৬ বছরে তারা রাউজান উপজেলায় ৪৬টির মত বিভিন্ন এবাদতখানা ও ধর্মীয় গৃহ ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছেন এবং সেখানে ইসকন মন্দির নির্মাণের চেষ্টা চালিয়েছে বারবার। চট্টগ্রামের রাউজানের একটি ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসার প্রবেশমুখে দেয়াল নির্মাণ করে বন্ধ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে তারা যুক্ত ছিল। এছাড়া বিভিন্ন মাদ্রাসা ও মুসলিম সম্প্রদায়ের জায়গা দখল করে হিন্দু মন্দিরের জন্য বরাদ্দ দেওয়ার উদ্দেশ্যও তারা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল।
বর্তমানে ইসকনকে একটি জঙ্গী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করার দাবী তোলা হয়েছে এবং তাদের সাথে গভীর সম্পর্ক থাকার কারণে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনগণ ফজলে করিম, ফারাজ করিম এর বিরুদ্ধে অতিদ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছে।
রাউজানের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, এই চিন্ময়কে একাধিকবার ফজলে করিমের হয়ে হিন্দুদের কাছে ভোট চাইতে দেখেছি। সকাল সন্ধ্যা ইসকনের সাথে উঠাবসা করা ফজলে করিম চৌধুরীর অভ্যাস ছিল। সে রাউজানে গহীন জঙ্গলে তার জমিতে একটি আয়নাঘরও বানিয়েছে। ইতোমধ্যে তার আয়নাঘরটি দেখিয়েছে বিভিন্ন পত্র পত্রিকা। যেখানে অনেককেই ধরে এনে শাস্তি দিত এই ফজলে করিম ও তার ছেলে ফরাজ। এই দুই দশকে আমাদের অনেক জালিয়েছে এই জালিম। আমরা চাই তার কঠিন শাস্তি হোক। যেন এই চট্টগ্রামে তার মত আর কোন শাসক জালিম হয়ে উঠতে না পারে।
আরো পড়ুন।
http://বরিশাল জেলা জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের ৪৪ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা