বান্দরবানের মানবাধিকার নেত্রী নীলিমা আক্তার নীলার জীবনের গল্প।

বান্দরবানের মানবাধিকার নেত্রী নীলিমা আক্তার নীলার জীবনের গল্প।

বান্দরবানের মানবাধিকার নেত্রী নীলিমা আক্তার নীলার জীবনের গল্প।

বান্দরবান প্রতিনিধি।

একটি গরীব অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে, ভয়ঙ্কর এক বিপদে পড়েছিলাম আমি।বান্দরবান স্টেডিয়াম এলাকায় প্রায় ৩০০ পরিবার আমাকে আটকে রেখেছিলো। এক নেতার ফোন এলো,বললো নীলিমাকে ঐখানেই পুঁতে ফেলেন।বান্দরবানের সাবেক ওসি গোলাম সারোয়ার রাত ২টায় আমাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে বাড়ি পৌঁছে দেন।
মানবাধিকার কাজ করতে গিয়ে একের পর এক বাঁধা, একের পর এক ফোন, তোকে একদম উড়িয়ে দেবো নানা হুমকি ধামকি। এইসব কথাগুলো আমাকে আরো সাহসী করে তুললো, আমি এগোতে লাগলাম সাহস, শক্তি এবং সততায়। সাবেক মন্ত্রী আমাকে ডেকে পাঠালেন এবং সাফ সাফ বলে দিলেন, তোমাকে আর বান্দরবানে কাজ করতে দেয়া হবে না। আমি খুব রাগান্বিত হয়ে বললাম, কারোর ক্ষমতা নেই আমাকে আটকায়। সেসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন, বান্দরবান সাবেক জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক, সাবেক পুলিশ সুপার, বান্দরবান সদর থানার সাবেক ওসি মোঃ রফিকউল্লাহ এবং শতাধিক নেতা কর্মী।
বান্দরবান কাজ করতে গিয়ে বুঝতে পারলাম, কতোটা ভয়ঙ্কর আতঙ্কের মধ্যে মানুষ বাস করছে,কতোজন হাত ধরে বলছে আমাদের বাঁচান। অং মেচিং এর মৃত্যু রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে মানবাধিকার কর্মীরা পড়েছিলাম বিপদের মুখোমুখি । রুমা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে গহীন জঙ্গলের ভেতর হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলাম নদীর বুকে, ভেবেছিলাম বেঁচে নেই আমি।মানুষকে বাঁচানোর আপ্রাণ লড়াইটা আমার কাছে ভীষণ ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছিল। আমি ছুটে যাচ্ছি আমার মতো করে। হঠাৎ একটি মার্ডার কেইসের মামলায় ১৪ জন অভিযুক্তের একজন জামিন পেয়ে আমার এখানে এলেন এবং বিস্তারিত সব খুলে বললেন। তদন্ত করতে গিয়ে দেখলাম যে মানুষটাকে মেরে ফেলার কারণে তাদের মার্ডার কেইসের মামলা সে মানুষটা বেঁচে আছে। কেন এমন মিথ্যে সার্টিফিকেট ডাক্তার দিয়েছেন, সেকথা জানার জন্য ডাক্তারের মুখোমুখি দাঁড়ালাম। ডাক্তার তিনঘণ্টা পর বলতে বাধ্য হলেন,তিনি অন্যায় করেছেন।
আমার উপর হামলা হলো,থানায় আমার অভিযোগ নিলেন না, বরং যারা আমার পক্ষ হয়ে গিয়েছিলেন তারা আমার বিরুদ্ধে কথা বললেন, উল্টো ওসিসহ তারা আমাকে হুমকি দিলেন, আমি তাদের কথায় এতোটা আহত হয়েছিলাম, বান্দরবান উপজেলা অফিসের সামনে দিয়ে হেঁটে আসার সময় শুধু আমার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পড়ছিলো, অমানুষ নেতাগুলো তখন আমার পেছন পেছন আসছিলো। ঠিক সে মূহুর্তে একটি বাইক আমার পথ আগলে দাঁড়ালেন এবং পেছনজন নেমে এসে আমাকে নরম কন্ঠে বললেল, নীলিমা আপু থানায় কী হলো বলেন তো একটু। বললাম আপনারা কে জানিনা ভাই, জানার প্রয়োজনও নেই। চেনা মানুষগুলোকেই চিনতে পারলাম না। আমার অভিযোগ থানায় নেয়নি ভাই। ভদ্রলোক পকেটে হাত দিয়ে একটি কার্ড বের করে আমার হাতে দিলেন, বললেন, আমরা গোয়েন্দা কর্মকর্তা, প্রয়োজন হলে আমাদের কল করবেন, নিশ্চয়ই আপনার মতো মানুষের পাশে খুব আগ্রহ নিয়ে থাকতে চাই। সেদিন আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, সাংবাদিক আরাফাত এবং কৈশিক, দাঁড়িয়েছিলেন বান্দরবান সাবেক সিভিল সার্জেন্ট এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা।
দিনে ৮/৯টি করে অভিযোগ, আমি খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। কখনো ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করেছি কিনা মনে নেই, এতোটা সময় ওদের পেছনে আমি ব্যয় করেছি বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে একটাকাও নেইনি বরং ঘন্টার পর ঘন্টা আমার টাকা দিয়ে মোবাইলে কথা বলেছি ওদের সাথে,মিলিয়ে দেয়ার পর দেখতে গিয়েছি ওরা ভালো আছে কিনা। অপহরণের হাত থেকে উদ্ধার করেছি পূরবী এবং আসমাকে। ওদের মুখের হাসিই ছিলো, আমার সবচেয়ে সাহস, প্রেরণা।
এবার পরে গেলাম মস্ত বিপদে। বান্দরবান সাবেক জেলা প্রশাসক দাউদুল ইসলাম খুব মন খারাপ নিয়ে বললেন, আপনি এমন পর্যায়ে চলে গেছেন আমাদের হাতে কিছুই নেই। সেখানে চারজন ম্যাজিস্টেট বসা ছিলেন, একজন বললেন, স্যার আমরা কী উনার জন্য কিছুই করতে পারিনা? আমি জেলা প্রশাসকের রুম থেকে খুব ক্লান্ত মনে বের হলাম, চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসছে আমার, ভাবছি আমার কিছু হয়ে গেলে, মানুষগুলোর কী হবে?সেখান থেকে আমি পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গেলাম, দেখা হয়ে গেলো অতিরিক্ত সাবেক পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান ভাইয়ার সাথে, উনি অফিসে বসালেন চায়ের অর্ডার দিলেন,বললেন, কী হয়েছে আমায় বলতে পারেন, চা খেতে খেতে সব বললাম, তিনি হাসলেন এবং বললেন, দেয়ালে যদি পিঠ ঠেকে যায় সমস্যা নেই, এই ভাইটি হাতটি টেনে তুলবে,বোনকে বাঁচানোর জন্য একটি ভাই-ই যথেষ্ট। কেমন যেনো চারিদিক আলো হয়ে গেলো,মনটা আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে গেলো, বার বার আল্লাহকে স্মরণ করলাম।
ছুটে যাচ্ছি আমি আমার মতো। কিন্তু নোংরা আবর্জনা গুলো কিছুতেই আমার পথ ছাড়ছে না।রাগে ক্ষোভে আমি আরো ভয়ঙ্কর হয়ে গেলাম।বান্দরবান সাবেক মন্ত্রীর সামনে বান্দরবান পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলরের কলার ছেপে ধরলাম,বললাম আমাকে রাগালে আমি কতোটা ভয়ঙ্কর হতে পারি ভাবতেও পারবি না। সেদিন শতাধিক মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন,সাবেক এক পুলিশ সার্জেন্ট সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, আপনার পাশে আছি।
আমার একটি পদবী আছে, গর্বিত এক পদবী, আমার বাবার দেয়া নাম নীলিমা আক্তার নীলা, আমি এই সর্বশ্রেষ্ঠ পদবী নিয়ে লড়াই করবো দুষ্টের সঙ্গে। বান্দরবানকে অন্ধকার হাত থেকে মুক্ত করে
বান্দরবানকে এক স্বাধীন পৃথিবী উপহার দিবো, তারপর আমি বাঁচি আর না বাঁচি আমার আফসোস নেই।

একদিন বান্দরবান হবে স্বর্গের শহর, সারা বিশ্ব থেকে লাখো লাখো পর্যটক আসবে নির্মলতার এক আনন্দ নিয়ে, ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি উড়ে বেড়াবে এ ডাল থেকে ঐডালে।বান্দরবানের মানুষের মুখের আনন্দ ছড়িয়ে যাবে সারাবিশ্বে গৌরবতার এক ইতিহাস নিয়ে। এমন বিশাল আনন্দ বান্দরবান মানুষ ছুঁয়ে দেখবে নির্মল আনন্দে।
নীলিমা আক্তার নীলা

 

আরো পড়ুন।

 

http://কক্সবাজার পর্যটন শহর হোটেল মোটেল জোন এর মাদক সম্রাট রাসেলের দৌড়াত্ব দিন দিন বেড়েই চলছে।

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *