সিংড়ায় আগাম জাতের আমন ধান কাটার ধুম।
মোঃ আবুল বাসার সাইফুল ক্রাইম রিপোর্ট।
নাটোরের সিংড়ায় কৃষি প্রধান চলনবিলের মাঠে মাঠে শুরু হয়েছে আগাম জাতের বোনা ও রোপা আম ধান কাটার ধুম। আমন ধান কাটার এ মৌসুমকে ঘিরেই শুরু হয় বাঙিালির চিরায়িত নবান্ন উৎসব। এ বছর পর পর দুইবার বন্যার কারনে বোনা আমনের ফলন কিছুটা কম হলেও রোপা আমনের ফলন ভালো হয়েছে। ধানের বর্তমান বাজার ঠিক থাকলে লাভের মুখ দেখবেন বলে আশা করছেন কৃষক। বন্যা কবলিত সিংড়া উপজেলায় সাধারনত নীচু এলাকায় বোনা আমন আর কম নীচু এলাকায় রোপা আমন ধান চাষ হয়ে থাকে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলনবিল এলাকায় বোনা আমন ধানের আবাদ মূলত কৃষকের জন্য লাভের একটি আবাদ। কেননা এ আবাদে শুধু মাত্র বীজ ছিটিয়ে আসলেই হলো। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের খরচ কম থাকায় কৃষকরা লাভবান হন।
সরেজমিনে উপজেলার সাতপুকুরিয়া, ইন্দ্রাসন, ডাহিয়া, বেড়াবাড়ি, চৌগ্রাম সহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায় কৃষকরা মনের আনন্দে সরসড়িয়া, দিঘা, সাদা দিঘা, কাজল দিঘাসহ বিভিন্ন জাতের বোনা আমন ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। বন্যা কবলিত এসব এলাকার বেশির ভাগই বোনা আমন ধানের চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে
কিছু এলাকায় বানের পানি নামতে দেরি হওয়ায় নৌকা করে ধান কাটতে হচ্ছে কৃষকদের। এদিকে বোনা আমনের পাশাপাশি রোপা আমন ধানও কাটা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে রোপা ও বোনা আমন ধান কাটতে স্থানীয় শ্রমিকদের পাশাপাশি পাবনা, রংপুর, রাজশাহী সহ বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতি বছরের মত এবছরও অনেক শ্রমিকের দল চলনবিলে এসে ধান কাটছেন।
ছোট খোলবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আয়েন উদ্দিন বলেন, আমার ৪০ বিঘা জমিতে রোপা আমন ধান আছে। সবেমাত্র কাটা শুরু করেছি। ১০ বিঘা জমির ধান কেটে ঘরে তুলেছি। প্রতি বিঘায় গড়ে ফলন হয়েছে ৭ থেকে ৮ মণ। গতবছর ফলন পেয়েছিলাম ৮ থেকে ৯ মণ । গতবছরের চেয়ে প্রতি বিঘায় ফলন কমেছে ১ মণ। তিনি জানান পর পর দুইবার বন্যার কারনে এবছর বোনা আমনের ফলন কম হয়েছে।
বোনা আমনের পাশাপাশি রোপা আমন ধান কাটাও শুরু করছেন কৃষক। রোপা আমন চাষীরা জানায়, তাদের ফলন গতবছরের চেয়ে ভালো হয়েছে। প্রতি বিঘায় ১২ থেকে ১৪ মণ হারে ফলনের আশা করছেন তারা। এক সপ্তাহ পরে পুরোদমে রোপা আমন কাটা শুরু হবে বলে ওই কৃষকরা জানান।
আয়েশ গ্রামের কৃষক শেখ বাহা উদ্দিন জানান, ইরি ধানের বর্তমান বাজার ১৬৫০ টাকা থেকে ১৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে আর আমন ধানের বাজার ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা প্রতি মণ। শেষ পর্যন্ত এই বাজার ঠিক থাকলে আমন ধানে আমরা লাভ করতে পারবো।
সাতপুকুরিয়া গ্রামের কৃষক রউচ উদ্দিন ও ডাহিয়া গ্রামের কৃষক আলহাজ জানান, আমাদের জমিতে এখনও বানের পানি থাকায় নৌকা দিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে। এতে শ্রমিক খরচ বেশি লাগছে। বিলের নীচু এলাকায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা খাল দখল করে বানা ও সোঁতিজাল দিয়ে মাছ ধরায় পানি নামতে দেরি হচ্ছে। এবিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ খন্দকার ফরিদ জানান, উপজেলার এ বছর ২৯ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে রোপা আমনের চাষ হয়েছে ২৩ হাজার ৬১০ হেক্টর আর বোনা আমন চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জমি। এছর ফলন আর দাম দুটোই ভালো থাকায় কৃষকরা লাভবান হবেন। আমন ধান কেটে ঘরে তোলা পর ওই জমিতে আগামী বোরো চাষের আগের সময়টায় অনেক কৃষক সরিষা সহ বিভিন্ন সবজি চাষ করবেন। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
আরো পড়ুন।
http://বাঁশখালীতে মামার বাড়ির পিছন থেকে যুবকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার!